কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাঁশের বানা তৈরি করে ভাগ্য বদলে গেছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী ইউনিয়নের জাবরা গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের। তারা করে কয়েক যুগ ধরে বাঁশের বানা বানিয়ে এবং তা বিক্রি জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
এক সময় পরিবারগুলোর দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। অভাব-অনটন থাকায় তারা খুবই কষ্টে দিন কাটাতো। বাঁশের বানার তৈরি শিল্পে তাদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি পাল্টে দিয়েছে পুরো গ্রামের চিত্র। এক সময় যাদের অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটতো এখন তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই স্বচ্ছল। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছে ।
তাদের তৈরি বাঁশের বানা ঢাকা, গাজিপুর, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, পাবনা, সাতক্ষীরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, নরসিংদীসহ প্রায় ১৪টি জেলায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আর এসব বানা বাসা-বাড়ির ভেতরে এক ধরনের বেড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
জাবরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারগুলোর সবাই বাঁশের বানা তৈরিতে ব্যস্ত। তবে এ কাজে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে নারীরাও কাজ করে যাচ্ছে। বাড়ির বউ-ঝিরা বসে না থেকে ঘর গৃহস্থালীর কাজ শেষে যোগ দেয় পুরুষদের সঙ্গে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামটিতে উৎসবের আমেজে চলছে এ কাজ।
জাবরা মাঝিপাড়া এলাকার বয়োবৃদ্ধ মাদারি রাজবংশী জানান, এ গ্রামে প্রায় তিন যুগ ধরে বানা তৈরির কাজ হয়। তিনি জানান, লাভ যাই হোক না কেন এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি। সরকারি-বেসরকারিভাবে আমাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে আমরা এ শিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারবো। দেশের বেকার লোকদের কর্মসংস্থানও হবে।
জাবরা বাজারের পাশেই কথা হয় রতন রাজবংশীর সাথে। তিনি জানান, ১২০টি পরিবার এই বানা তৈরির কাজে সরাসরি জড়িত। পৈত্রিক পেশা হিসেবেই তারা এ কাজ করে থাকে বলে তিনি জানান। এখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি এ কাজে মাসে গড়ে ৫/৭ হাজার টাকা উপার্জন করে। এতে তারা পড়াশোনার খরচ ছাড়াও পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারছে।
গৃহবধূ আমেলা বেগম (৪০) জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি বানা তৈরি করছেন। প্রতিদিন ঘরের কাজের পাশাপাশি দুটি বানা তৈরি করা যায়। বছরের বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এ কাজের চাহিদা একটু বেশি থাকে। গড়ে দিন প্রতি ৩ থেকে ৪শ’ টাকার মতো আয় হয়।
স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্রী পূর্ণিমা রাজবংশী ও মেধাবী ছাত্র মাসুম মিয়া জানায়, লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মাকে সাহায্য করতে পারছি এ কাজে। তাতে বাবা মায়ের অনেকটা কষ্ট দূর হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে কিছু বাড়তি আয়ও হয়। পাইকারী উজ্জ্বল কুমার রাজবংশী জানান, ৯ ফুট/১৫ ফুট আয়তনের একটি বানা তৈরি করতে গড়ে ১১শ’ টাকার মতো খরচ হয়। বিক্রি করেন ১২ থেকে ১৩শ’ টাকা। পাইকাররা বাড়ি থেকে এগুলো কিনে নিয়ে যায়।
বানিয়াজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু জানান, সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা ও সুদমুক্ত ঋণ পেলে এ এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ বানা শিল্পের আরো ব্যাপক প্রসার ঘটবে। সেই সাথে এলাকার অনেক শিক্ষিত ছাত্রছাত্রী ও বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সুত্রঃ বাসস, রিপোর্টঃ এম এ মোন্নাফ খান