কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্রাকৃতিক প্রজননের নিরাপদ ঠাঁই না পাওয়ার অভাবে হারিয়ে গেছে অনেক পাখি। সেই বিপন্ন পাখিদলেরই একটি বালিহাঁস। টিকে থাকার সংগ্রামে কৃত্রিম কাঠের বাসা পেয়ে তাতেই ডিম দিয়েছে। ডিম ফুটে বেরিয়েছে ছানা। বালিহাঁসের ছানাপোনারা এখন ডুবসাঁতার কাটছে হাওরের পানিতে। মৌলভীবাজারের হাইল হাওরের পাখি ও মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল এলাকায় পাকা খুঁটি ও গাছের মধ্যে স্থাপন করা কাঠের বাক্সের কৃত্রিম বাসাই হয়ে উঠেছে বালিহাঁসের নিরাপদ আশ্রয়। এখানেই ওরা ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। খবর প্রথম আলো অনলাইনের।
ইউএসএইডের অর্থায়নে বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস (সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডি) কর্তৃক বাস্তবায়িত ক্রেল (ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেম অ্যান্ড লাইভলিহুড) প্রকল্প ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বাইক্কা বিল এলাকায় স্থাপন করা ৩০টি কাঠের বাক্সের মধ্যে ১১টি বাক্সে ডিম দিয়েছে বালিহাঁস। ৩০টির মধ্যে ২৫টি বাক্স বাঁধা হয়েছে পাকা খুঁটিতে এবং পাঁচটি বাঁধা আছে গাছের ডালে।
এ বছর যে ১১টি কাঠের বাসায় বালিহাঁস ডিম দিয়েছে তার মধ্যে নয়টি পাকা খুঁটির, দুটি গাছের ডালে। একটি বাক্সে ২টি থেকে সর্বোচ্চ ৩১টি পর্যন্ত ডিম পাওয়া গেছে। কাঠের কৃত্রিম বাসাগুলো নিরাপদ হওয়ায় একই বাক্সে একাধিক পাখি ডিম পেড়েছে। এই ১১টি বাক্সের পাঁচটিতে বাচ্চা ফুটেছে। বাচ্চাগুলো বাসা ছেড়ে বাইক্কা বিলে নেমে গেছে। সাধারণত ডিম ফোটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চাগুলো বাসা থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়ে। পানিতে ডুব দেয় ও সাঁতার কেটে বেড়ায়। বালিহাঁসের ডিম দেওয়ার মৌসুম সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। কখনো কখনো অক্টোবর পর্যন্তও ডিম দিয়ে থাকে।গত বছর (২০১৫) ২৮টি বাক্সের মধ্যে ২১টিতে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়েছিল বালিহাঁস।
বেসরকারি সংস্থা ম্যাচ্ (ম্যানেজম্যান্ট অব অ্যাকুয়াটিক সিসটেম থ্রো কমিউনিটি হাজবেনট্রি) প্রকল্প ২০০৬ সালে প্রথম ১০ থেকে ২০ ফুট উঁচু পাকা ১০টি খুঁটির সঙ্গে ১০টি কাঠের বাক্স স্থাপন করে। কিন্তু সে বছর কোনো বালিহাঁস বাক্সে বাসা বাঁধেনি। ২০০৭ সালে প্রথম দেখা যায় তিন-চারটি বাক্সে বালিহাঁস বাসা বুনেছে। পরে ডিম পেড়েছে ও বাচ্চা ফুটিয়েছে। সেই থেকে প্রজননের জন্য নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত হওয়ায় প্রতিবছরই কিছু না কিছু বালিহাঁস বাসায় ডিম পেড়েছে, বাচ্চা ফুটিয়েছে।
দেশে এ রকম বাক্সে বালিহাঁসের ডিম পাড়ার এটাই একমাত্র স্থান। এই বাক্সগুলো দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে। ক্রেল প্রকল্প এর তত্ত্বাবধান করছে। প্রকল্পের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, বালিহাঁস বা Cotton Pygmy-goose হুমকিতে থাকা পাখিদের মধ্যে অন্যতম, যার বৈজ্ঞানিক নাম Nettapus coromandelianus. মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলাভূমিগুলোতে ২০-২৫ বছর আগে প্রায়ই বালিহাঁসের দেখা মিলত। প্রাকৃতিক প্রজননস্থল ধ্বংস ও পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্যে বালিহাঁসের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে এবং এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাচ্ছে। বালিহাঁস মূলত প্রাকৃতিক জলাশয়ের কাছের বড় গাছের কোটর, গর্ত বা পুরোনো দালানকোঠায় ডিম পাড়ে।
কৃপ্র / এম ইসলাম