কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ইলিশে সরগরম হয়ে উঠেছে বরিশাল নগরের পোর্টরোডের মৎস্য আড়ত। ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার পর আড়াই মাস বেকার বসে ছিলেন এখানকার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। এ সময় ইলিশের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভাদ্রের দ্বিতীয় সপ্তাহে হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে যায়।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা বললেন, ভাদ্রের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এখন প্রতিদিন ৬০০-৭০০ মণ ইলিশ আসছে। এতেই এই কেন্দ্রের ব্যবসায়ী-পাইকার-শ্রমিকদের মনে স্বস্তি এসেছে। দামও অনেকটা কমেছে। গত তিন দিনে দৃশ্যপট আরও বদলেছে। গত সোমবার থেকে এখানে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। এতে দামও কমে গেছে মণপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, ইলিশের আমদানি আরও বাড়বে এবং দাম আরও কমবে। খবর প্রথম আলো অনলাইনের।
বুধবার সকালে নগরের পোর্টরোড ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেল। দীর্ঘদিন সুনসান নীরবতায় থাকা পোর্টরোডের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রটি এখন শ্রমিক-পাইকার-আড়তদারদের হাঁকডাকে সরগরম। নীরবতা ভেঙে চেনা চেহারা ফুটে উঠেছে পোর্টরোডের। সামনে সার বাঁধা ট্রাক, তাতে তোলা হচ্ছে মাছের বাক্স। দম ফেলার, কথা বলার ফুরসত নেই কারও।
শাহ আলম নামের এক শ্রমিক বললেন, ‘কয়েক মাস ধইরা এইহানে মাছ তো দূরের কথা, মাছিও পড়ত না। হেই সময় মোগো মরণদশা অইছিল। কিন্তু কয় দিন ধইরা মাছের আমদানি অনেক বাড়ছে। মোগো আয়-রোজগারও কিছুটা বাড়ছে।’
ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্যৈষ্ঠের ১৫ থেকে শুরু হয় ইলিশের মৌসুম। আর শেষ হয় আশ্বিনের ১৫। এই ৪ মাস হলো ইলিশের মৌসুম। তবে ১০-১২ দিন ধরে বঙ্গোপসাগর ও বরিশালের আশপাশের নদ-নদীতে বেশ ইলিশ ধরা পড়ছে। বরিশাল মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আশরাফ আলী গতকাল বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর ও উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে দাম অনেক কমে গেছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ট্রলার এলে দাম আরও কমবে।’
গতকাল সকালে পোর্টরোডে ঘুরে জানা গেল, ইলিশের মৌসুমের শুরুতে, অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে সাড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ গ্রাম ওজনের ১ মণ ইলিশ পাইকারি বাজারে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। গতকাল বুধবার তা ১৭ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এ ছাড়া সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকায়, যা আগে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ২৯ হাজার টাকায়, যা আগে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপরিচালক মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ইলিশের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি, এটা আরও বাড়বে।’ তিনি জানান, গত বছর দেশে ২ লাখ ২১ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছিল। এ বছর ইলিশের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে অন্তত ১০ ভাগ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কৃপ্র/ এম ইসলাম