চাষা আলামীন জুয়েলঃ শাকসবজি উৎপাদনের জন্য জমি বা বাগানই শ্রেষ্ঠ জায়গা। তবে যারা শহরে বাস করে তাদেরও শাকসবজি উৎপাদনের রয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা। শহরের বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সারমাটি ভরে অনায়াসেই ঢেঁড়শ চাষ করা যায়। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তাছাড়া ভিটামিন -এ সহ অন্যান্য উপাদানও কিছু কিছু রয়েছে. বাংলাদেশে যে কোন সময় ঢেঁড়শ লাগানো যায়।
টবের মাটি ——
গাছের বৃদ্ধি এবং ঢেঁড়শের ভাল ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে. পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটি যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫ থেকে ৬ দিন আগে ভেজানো ১০০/১২৫ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
জাত —-
ঢেঁড়শের নানা জাত রয়েছে. এর মধ্যে পুশা শাওনী, কাবুলী ডোয়ার্ফ, লক্ষৌ ডোয়ার্ফ, লং গ্রীন, লং হোয়াইট, পেন্টাগ্রীণ-এসব বিদেশী জাত জনপ্রিয়।
সময় —–
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত অর্থাৎ বছরের সব সময়ই ঢেঁড়শ গাছ লাগানো যায়. তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শীতের শেষভাগ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত ঢেঁড়শ লাগানো যায়। এরপরও লাগানো যায় তবে নাবী ফসলে মোজাইক রোগ হয় বলে ফলন ভাল হয় না।
বীজ বপন —–
ঢেঁড়শের চারা রোপণকালীণ সময় আঘাত সহ্য করতে পারে না বলে সরাসরি মূল টবে বুনতে হবে. ঢেঁড়শের জন্য মাঝারী ধরণের টব হলেই চলবে. প্রতি টবে ২ থেকে ৩ টি বীজ বুনে দিতে হয়. চারা গজানোর পর একটি সবল চারা রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে হয়. খোসা শক্ত বলে ঢেঁড়শের বীজ দেরীতে গজায়. তাই বুনার আগে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে.
পরিচর্যা —-
ঢেঁড়শ গাছ বেশী পানি সহ্য করতে পারে না. গাছের গোড়ায় দাঁড়ানো পানি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দিতে হবে. প্রত্যেকটা টবে পানি যাতে না বেধে থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে.
গাছ ১০ থেকে ১২ সেঃ মিঃ বড় হলে টবের কিনার ঘেঁসে ১ চা চামচ ইউরিয়া ও ১ চা-চামচ মিউরেট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে.
রোগবালাই —-
শুঁয়া পোকা কচি কাণ্ড ছিদ্র করে গাছের ক্ষতি করে. ভাইরাস (মোজাইক) রোগ ঢেঁড়শে প্রায়ই দেখা যায়. এ রোগে পাতা হলদে হয়ে কুঁচকে যায়. রোগাক্রান্ত গাছ তুলে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়. শুঁয়া পোকার আক্রমণ থেকে ঢেঁড়শ গাছকে বাঁচাতে হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিঃ লিঃ ডায়াজিনন -৪০, নুভাক্রণ -৪০, একালাক্স -২৫ এর যে কোনটি অথবা ১ লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার সিমবুশ -১০ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে.
ফসল সংগ্রহ —-
বীজ বপনের দু’মাস পরেই ফল পাওয়া যায়. কচি অবস্থায় ঢেঁড়শ তুলতে হয়. দেরি হলে ফল শক্ত হয়ে যায় ও সেটা খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়. ঘন ঘন ঢেঁড়শ তুললে গাছে বেশি পরিমাণে ঢেঁড়শ আসে.
তথ্য সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক ।
* সকল কৃষক ও কৃষি অনুরাগী ভাই ও বোনদের জন্য শুভ কামনায় — চাষা আলামীন জুয়েল *