কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বরগুনা জেলার উপকূলের বিভিন্ন চরে শুটকি তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুটকি শ্রমিকরা এসে জড়ো হয় বরগুনার উপকূলবর্তী বিভিন্ন চরে। শুটকি তৈরীর এ কর্মযজ্ঞকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয় বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলার প্রায় দশ হাজার নারী পুরুষের। এসব শ্রমিকরা ব্যস্ত থাকে শুটকির উপকরণ সামুদ্রিক মাছ আহরণ ও শুকানোর কাজে। বছরের অর্ধেকটা সময় ধরে সচল থাকে উপকূলের শুটকি পল্লীগুলো।
বরগুনার আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা, লালদিয়ারচর শুটকি পল্লীতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস ধরে চলে শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ। শুটকিকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবীদের আনাগোনায় মূখরিত থাকে চরগুলো। এ সময়ে এখানে কথা বলার কিংবা শোনার যেনো ফুসরত নেই কারো। মাছধরা ট্রলার ও নৌকাগুলো তীরে নোঙর করতেই কুঁড়েঘর থেকে দৌড়ে যায় শ্রমিকরা। নৌকা থেকে চরের হাঁটু জলে ঝাঁপি ভর্তি ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নামায় এবংতারা বাঁশের ভাড়ে বয়ে নিয়ে যায় তীরে। মাছগুলো চাটাইয়ের ওপর বিছিয়ে রোদে শুকায়। তার আগে আবর্জনা পরিষ্কার ও বাছাইয়ের কাজ চলে। নারী ও শিশু শ্রমিকরাই প্রধানত এ কাজটি করে থাকে।
অক্টোবর-নভেম্বর মাসে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, মংলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জেলেরা নৌকাসহ সপরিবারে এ সব চরে এসে কুঁড়েঘর তৈরি করে অবস্থান নেয়। এ চরেই গড়ে তোলে তাদের মৌসুমী সংসার। তাদের কারও কারও সাথে মহাজনদের থাকে স্থায়ী বা মৌসুমী চুক্তি। মহাজনরা কাজের বিনিময়ে তাদের থাকা, খাওয়া ও মজুরী দেন।
যেমন, কিশোর শ্রমিক হাসান এসেছে সাতক্ষীরা থেকে। শুধু হাসানই নয়, আরও কয়েকজন কিশোর আছে তার সঙ্গে। হাসান পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে এ চরে কাজ করছে। বছর চারেক হলো তার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরিফ ও ঝন্টু। হাসান জানায়, স্থানীয় দূর স¤পর্কের চাচার সঙ্গে সে প্রথম এ চরে আসে। তখন পেটে-ভাতে কাজ করতো। এখন বেতন পায় মাস গেলে।
চরের বাসিন্দা আ. হক জানান, তারা কোনো শিশুকে জোর করে কাজে আনেন না। পরিবারে আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকায় ওরা এ চরে আসে কাজের সন্ধানে। বছরের অর্ধেক সময় এখানে অস্থায়ী ঘরবসতি গড়ে তোলে কয়েকশ পরিবার। এসব শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়। তাই এসব এলাকায় শিশুদের জন্য স্যাটেলাইট স্কুল স্থাপন করা দরকার। যেসব শিশু শিক্ষা থেকে দূরে থাকছে, স্যাটেলাইট স্কুলের মাধ্যমে তাদের শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করা যেতে পারে ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, শুটকি চরের বাসিন্দারা যেহেতু অস্থায়ী। তাই এ চরের শিশু কিংবা কিশোরদের শিক্ষার ব্যাপারে এখনও সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুকুমার চন্দ্র হাওলাদার জানান, দুর্গম চর এলাকায় নতুন করে স্কুল স্থাপন ও পুরনো মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোকে সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, কর্মজীবি এ শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা বিশেষ কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা করা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জানান, সাগর উপকূলের বিভিন্ন চরাঞ্চলে উৎপাদিত শুটকিকে কেন্দ্র করে দেশের ফিড মিলগুলোর উৎপাদন অব্যাহত থাকে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মিন্টু জানান, সাগর উপকূলের শুটকি পল্লীগুলোতে মানবিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারলে এ এলাকায় শুটকি শিল্প বিকশিত হতে পারবে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/ এম ইসলাম