এম.এ ওয়াদুদ মিয়া: শরীয়তপুর জেলার তিনটি উপজেলায় ছয়টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গত আগষ্ট মাস থেকে নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে, অদ্যবধি সে ভাঙ্গন অব্যহত রয়েছে। বিদ্যালয় গুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ২ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে আর অল্প কিছুদিন পরেই শুরু হচ্ছে প্রাথমিক সমাপনী, জে.এস.সি এবং এস.এস.সি নির্বাচনী পরীক্ষা। বিদ্যালয় গুলো নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ায় কারণে বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অভিবাবকরা। বর্তমানে বিদ্যালয় গুলোতে প্রায় ২ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।
নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া বিদ্যালয় গুলো হচ্ছে, জাজিরা উপজেলার সুরত খাঁর কান্দি জগৎ জননী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলমীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুন্ডেরচর হাসেম আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আলহাজ্ব মোঃ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা হাওলাদার কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। গোসাইরহাট উপজেলার ছৈয়ালপাড়া নান্নু মুন্সি কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয় গুলোর জমি এবং ভবন নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় অন্যত্র ক্লাস চলছে। জাজিরা উপজেলার আলহাজ মোঃ ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম এবং নবম শ্রেণীর পরীক্ষাগুলো হচ্ছে জাজিরা উপজেলার কাকড়া ভোগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বর কাঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, কুন্ডেরচর হাসেম আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে ইয়াকুব মাদবর কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং কলমীর চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস চলছে কালু বেপারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর জায়গার অভাবে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখনও ক্লাস শুরু করাতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ।
আলহাজ্ব ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এবং কুন্ডেরচর হাসেম আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানে আলম, সুরমা আক্তার, অনিক এবং তামিম হোসেন বলে, আমাদের চোখের সামনে বিদ্যালয়টি পদ্মা নদীর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। সামনে আমাদের পরীক্ষা। ক্লাস না করতে পারলে ভালো রেজাল্ট করবো কি ভাবে ? আলহাজ্ব ইসমাইল মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার দত্ত বলেন, নদীর তীব্র ভাঙ্গনে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা চোখ দিয়ে শুধু দেখলাম, কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না। তবে এ বিদ্যালয়ের অষ্টম এবং নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গুলো হচ্ছে জাজিরা উপজেলার কাকড়া ভোগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বর কাঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জাজিরা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, জাজিরা উপজেলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পদ্মার ভাঙ্গনে বিদ্যালয় গুলো নদীর গর্ভে চলে গেছে। আমরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যত্র পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি এবং ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যালয় ভবনগুলো পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় পাঠদানে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষার্থীদের পাঠদান স্বাভাবিক রাখতে। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের কারণে ৭ টি বিদ্যালয় নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিদ্যালয় গুলোর ক্লাস করানোর জন্য অন্যত্র টিনের ঘর তৈরী করে দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে না পড়ে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম