কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কক্সবাজার জেলায় এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। জমে উঠছে সুপারির হাটগুলো। সেখানে প্রচুর সুপারি বেচাকেনা হচ্ছে। সুপারি উত্পাদন খাতে চাষিদের ২৭২ কোটি টাকা আয় হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
দীর্ঘকাল ধরে কক্সবাজার জেলার সুপারি ঢাকা, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার সুপারির ব্যবসা হয় কক্সবাজার ঘিরে। বিগত এক মাস ধরে সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সুপারির হাট বসছে রামু উপজেলার ফকিরা বাজারে। উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া বাজারে হাট বসছে প্রতি রোববার। টেকনাফ পৌরসভা সংলগ্ন এলাকায় সবচেয়ে বড় সুপারির হাট বসছে বৃহস্পতিবার।
বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ কাঁচা সুপারি বিক্রির জন্য বাজারে এনেছেন ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনাও হচ্ছে প্রচুর। ভালো মানের প্রতিপণ সুপারি (৮০টি) ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের ২০০ থেকে ২২০, নিম্নমানের ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাজারিকুল এলাকার সুপারি চাষি খায়রুল আলম জানান, উপজেলার জোয়ারিয়ানালা, রাজারকুল, গর্জনিয়া, কাউয়ারখোপ, কচ্ছপিয়া, ঈদগড়, চাকমারকুল, রশিদনগর, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, ফতেখাঁরকুল, খুনিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন
হাটবাজারে হাটের দিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়। গত মঙ্গলবার তিনি নিজের বাগানের প্রায় ১০ কাহন (১৬০ পণ) সুপারি বাজারে নিয়ে যান। প্রতি কাহন সুপারি বিক্রি করেন ৩ হাজার ২০০ টাকা করে।
জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার সাবরাংয়ের কাটাবনিয়া, কচুবনিয়া, ডেইল্যাবিল, নয়াপাড়া, আচারবনিয়া, লেজিরপাড়া, পানছড়িপাড়া, সিকদারপাড়া, বাজারপাড়া, মণ্ডলপাড়া, মুণ্ডার ডেইল, হাদুর ছড়া, চাণ্ডলীপাড়া, সদরের খুনকারপাড়া, মহেশখালিয়াপাড়া, গোদারবিল, ডেইলপাড়া, লম্বরী, লেংগুরবিল, মিঠাপানির ছড়া, জাহালিয়াপাড়া, হাবির ছড়া, রাজার ছড়া, নতুন পল্লানপাড়া, বাহারছড়ার কচ্চপিয়া, বড় ডেইল, জাহাজপুরা, মারিশবনিয়া, শীলখালী, শামলাপুর, হ্নীলার জাদীমুরা, রঙ্গিখালী, লেচুয়াপ্রাং, পানখালী, হোয়াইক্যংয়ের কম্বনিয়াপাড়া, রইক্ষ্যং, লাতুরীখোলা, চাকমাপাড়া, ডেইগ্যাকাটা এলাকায় সুপারির চাষ হয়েছে। এসব এলাকার শত শত পরিবার এখন সুপারি চাষের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া চলতি মৌসুমে সুপারির ভালো ফলন হয়েছে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা সোনারপাড়া, নিদানিয়া, ইনানী, মনখালী, চেপটখালী ও মাদারবনিয়ায়।
টেকনাফের ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানিয়েছেন, বসতবাড়ির আঙিনায় করা ৩০ শতক বাগানের সুপারি বিক্রি করে এ বছর ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি। সুপারির দাম ভালো থাকায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৪০ হাজার টাকা বেশি লাভ হয়েছে তার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার দে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৮ উপজেলায়ই কম-বেশি সুপারির চাষ হচ্ছে। তুলনামূলক বেশি সুপারি উত্পাদন হয় টেকনাফ, উখিয়া ও রামু উপজেলায়। এর মধ্যে টেকনাফে বেশি সুপারি উত্পাদন হয় প্রতি মৌসুমে। সারাদেশে টেকনাফের সুপারির সুখ্যাতি রয়েছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার দে আরও বলেন, জেলায় প্রায় ৩ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান করা হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার মানুষ এই সুপারি চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রতিহেক্টর জমিতে সাধারণত চার টনের মতো সুপারি উত্পাদন হয়। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৩৬ হাজার টন সুপারি উত্পাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই খাতে চাষিদের আয় হবে প্রায় ২৭২ কোটি টাকা।
সুত্রঃ সকালের খবর / কৃপ্র/ এম ইসলাম