কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কেঁচো-কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে আর স্বাবলম্বী হয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক নারী। বিশেষ করে এ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দাপনা পরিণত হয়েছে কেঁচো-কম্পোস্ট সারের গ্রামে। বর্তমানে এ গ্রামের শতভাগ বাড়িতেই এ সার তৈরি করা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে কালীগঞ্জের কেঁচো-কম্পোস্ট সার। কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে দাপনা গ্রাম। এ গ্রামের প্রত্যেকের বাড়িতেই দুই থেকে আটটি করে গরু আছে। এসব গরুর গোবর কাজে লাগিয়েই এখানকার নারীরা উত্পাদন করছেন কেঁচো-কম্পোস্ট সার। আর এ কাজে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন রেবেকা ও সোনাভান নামে দুই গৃহবধূ।
প্রথম পর্যায়ে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতায় এ কাজ শুরু করেন তারা । এর পর তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। বর্তমানে এ গ্রামের ৬০টি ঘরেই কেঁচো ও কম্পোস্ট সার উত্পাদন হচ্ছে। গৃহবধূ রেবেকা এখন প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ কেজি কম্পোস্ট ও ২০ কেজি কেঁচো উত্পাদন করছেন। তিনি প্রতি কেজি কম্পোস্ট সার ১০ টাকা ও প্রতি কেজি কেঁচো ১ হাজার ৫০০-১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রতি মাসে গড়ে আয় করছেন ১০ হাজার টাকা।
এ গ্রামের সব বাড়ির নারীরাই এখন কম্পোস্ট প্লান্ট তৈরি করেছেন। এর থেকে উত্পাদিত সার নিজেদের জমিতে ব্যবহারসহ বিক্রি করা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরাই এখান থেকে সার ও কেঁচো ক্রয় করে পাঠাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই ও সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সমগ্র উপজেলায় বর্তমানে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার কেঁচো ও সার উত্পাদন হচ্ছে। এ গ্রামের নারীরা মিলে একটি মহিলা সমবায় সমিতি করেছেন। সার বিক্রির একটি অংশ তারা এ সমিতিতে জমা রাখেন। বর্তমানে সমিতির মূলধন প্রায় ৩ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সমিতির মাধ্যমে একটি পাওয়ার টিলার ও দুটি গরু কেনা হয়েছে। সমিতির মাধ্যমে গ্রামের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায়ও সহযোগিতা করেন তারা।
দাপনা গ্রামের নারীদের মতো উপজেলার মোস্তবাপুর, মহেশ্বরদাচা, নিয়ামতপুর, মহিষাডোরা, বলরামপুর, অনুপমপুর, হরিগোবিন্দপুর, আড়ুয়াশলুয়া, বলাকান্দর, ভোলপাড়া, বারোপাখিয়া, খামারমুন্দয়া, আগমুন্দিয়া ও মল্লিকপুর গ্রামের সহস্রাধিক নারী কেঁচো-কম্পোস্ট নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর এ কাজে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে জাপান ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড ও উপজেলা কৃষি অফিস। মোস্তবাপুর গ্রামের কৃষাণী ও ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম জানান, কেঁচো-কম্পোস্ট সার উত্পাদনে বেশি টাকা খরচ হয় না।
হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের প্রোগ্রাম অফিসার এসএম শাহিন হোসেন জানান, উপজেলার কৃষকদের পাশাপাশি কৃষাণী ও গৃহিণীদের কম্পোষ্ট তৈরি ও কেঁচো উত্পাদনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তারা। নিয়ামতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ রনি জানান, কেঁচো-কম্পোষ্ট এ অঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এখন কেঁচো চাষ হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে নারীদের সফলতা মুগ্ধ করার মতো।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, কম্পোস্ট সার পরিবেশবান্ধব। উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের কৃষাণীরা যে নিজেদের উত্পাদিত সার জমিতে ব্যবহার করছেন এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। কৃষি অফিসও তাদের এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছে। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছাদেকুর রহমান জানান, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীরা বাড়ির কাজের পাশাপাশি কেঁচো ও কম্পোস্ট সার উত্পাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এ বিষয়ে যে কোনো প্রয়োজনে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
সুত্রঃ ভোরের কাগজ / কৃপ্র/এম ইসলাম