কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়গুলোতে পলো বাইচের মহোৎসব চলছে। তলাবিহীন কলসির আদলে বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে ছোট ছোট ছিদ্র রেখে শৈল্পিক কারুকার্যে সুনিপুণভাবে মাছ ধরার যন্ত্রটি তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম ‘পলো’। এই এলাকায় পলো দিয়ে মাছ ধরাকে বলা হয় পলো বাইচ। শীতের সময় খাল-বিল, হাওর-বাওড়, জলাশয় ও পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে বিভিন্ন বয়সি মানুষ পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা হয়, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো দিয়ে মাছ ধরা। বাপ-দাদার আমল থেকে পলো দিয়ে মাছ ধরে আসছে। নদীমাতৃক এই দেশে পলো দিয়ে মাছ ধরার সংস্কৃতিটা এখনো টিকে আছে।
আগে প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতেই থাকতো দু-একটি পলো। ‘পলো’ মাছ ধরার কাজ ছাড়াও হাঁস-মুরগী ধরে রাখার কাজেও ব্যবহার হতো। গ্রাম বাংলায় প্রতি মৌসুমেই শুকনো মৌসুমে বিশেষ করে পৌষ ও মাঘ মাসে চলে পলো দিয়ে মাছ ধরার মহড়া। একবুক পরিমাণ পানিতে সারিবদ্ধ লাইন ধরে বাছাইলরা মাছ ধরা শুরু করে। বিশাল জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যান সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় থাকে গামছা বাঁধা।
পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেয়া আর হৈ হুলে¬াড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্য দৃশ্য। মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দেয়। এতে বুঝা যায় শিকার এবার হাতের মুঠোয়। যারা পলো দিয়ে মাছ ধরে তাদেরকে পলো বাইছাল বলে। প্রতিটি গ্রামে এই পলো বাইছালদের একজন সরদার থাকে। তার নির্দেশ মতে কবে কোথায় মাছ ধরা হবে তা মাইকিং করে প্রচার করা হয়।
পলো বাইচে সাধারণত দেশি মাছই বেশি ধরা পড়ে। রুই, কাতলা, বোয়াল, মৃগেল, চিতল, আইড়, রাজপুটি, কালবাউস, শোল, চিতল, টাকি ও গজার প্রভৃৃতি মাছও ধরা পড়ে। বর্তমানে অনেক হাওর, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছুটা জলাশয় থাকলেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না এবং আগের অনেক প্রজাতির মাছও বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়।
আর এ মাছ ধরা দেখতে আশপাশের কয়েক গ্রামের শতশত মানুষ উপস্থিত হয়। সব শ্রেনীর মানুষ এ অঞ্চলে পলো দিয়ে মাছ ধরতে যায় এবং আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে। উন্মুক্ত জলাশয়ে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুধু স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো চিনবেই না পলো দিয়ে কিভাবে মাছ ধরতে হয়। হারিয়ে যাচ্ছে পলো নিয়ে মাছ ধরার দিন। পরে যারা আসবে তারা আর পলো চিনবে না। নতুন প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম