‘রফতানিতে চিংড়িকে পেছনে ফেলতে পারে কাঁকড়া’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাঁকড়া বিদেশে রফতানি হচ্ছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০ হাজার ৫০০ টনের বেশি কাঁকড়া রফতানি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পণ্যের তালিকায় ‘সাদা সোনা’ গলদা চিংড়িকে পেছনে ফেলতে পারে কাঁকড়া। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হয়রানির শিকার হওয়ায় কাঁকড়া রফতানি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
খুলনা ও বাগেরহাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা জানান, শুধু কাঁকড়া রফতানি করে প্রতি বছর গড়ে আয় হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা। রফতানি তালিকায় অপ্রচলিত এ পণ্যই বদলে দিচ্ছে লাখো মানুষের ভাগ্য। বর্তমানে দেশের পাঁচ উপকূলীয় এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষ হচ্ছে। তবে নানা সমস্যার কারণে সাতক্ষীরায় অন্তত ১০০ কোটি টাকা মূল্যের রফতানিযোগ্য কাঁকড়া অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।
প্রজনন মৌসুমে নদ-নদী থেকে কাঁকড়ার পোনা আহরণ নিষিদ্ধ থাকে। ব্যবসায়ীরা জানান, এ সময় বিকল্প উত্স থেকে কাঁকড়া রফতানি করা হলেও প্রশাসনের সদস্যদের কাছে তারা নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন।
কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান শেখ বলেন, প্রজনন মৌসুমে নদী থেকে কোনো কাঁকড়া সংগ্রহ করা হয় না। এ সময় ঘেরের সংরক্ষিত কাঁকড়া বাজারজাত করা হয়। বিষয়টি পুলিশসহ প্রশাসনের অন্য সদস্যরা না জেনেই পথিমধ্যে পরিবহন আটকে দেন। এক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। চালনা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম গাজী বলেন, কোস্টগার্ড অনেক সময় না জেনে বুঝেই কাঁকড়া নষ্ট করে দেয়। দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকায় এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম অবস্থিত। আর এখানেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে বলে তিনি দাবি করেন।
পাইকগাছা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অদিবাস কুমার জানান, কাঁকড়া পানি থেকে ডাঙায় ওঠানোর পর চার-পাঁচদিনের বেশি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এর মধ্যে সেগুলো ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে হয়। না হলে মারা যায়। স্থানীয় পর্যায়ে ও হাইওয়েতে কোনোভাবে গাড়ি আটকে রাখা হলে এগুলো মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি এ ধরনের হয়রানি বন্ধের দাবি জানান।
পুলিশ কর্তৃক কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের হয়রানির অভিযোগ সম্পর্কে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে প্রথম কাঁকড়া রফতানি করা হয় ১৯৭৭ সালে। ওই বছর মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল। এর পর প্রতি বছরই রফতানি বেড়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর এর আকার দাঁড়ায় ১০ হাজার টন। গত অর্থবছর (২০১৫-১৬) তা ১০ হাজার ৫০০ টন ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কাঁকড়া রফতানির বড় অংশ যায় চীনে। এছাড়া মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ মিলিয়ে মোট ১৮টি দেশে এ কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে।
জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় মত্স্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের উপপরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, বর্তমানে খুলনা অঞ্চল থেকে কত টাকার ও কী পরিমাণ কাঁকড়া রফতানি হয় তার হিসাব নেই তাদের কাছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম