ড. মো. জামিল হাসানঃ ব্রি হাইব্রিড ধান৬ আমন মৌসুমের জন্য চাষ উপযোগী ব্রি উদ্ভাবিত একটি নতুন জাত। জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ডের ৯২তম সভায় কারিগরি কমিটি কর্তৃক জাত হিসেবে নীতিগতভাবে অনুমোদন লাভ করেছে। জাতটির কৌলিক সারি বিআর১৩৬১এইচ (ইজ১৩৬১ঐ)। জাতটির ক্রস কম্বিনেশন আইআর৭৯১৫৬এ/ বিআরআরআই২০আর (ওজ৭৯১৫৬অ/ ইজজও২০জ)। জাতটি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও যশোর অঞ্চলে কৃষকপর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত হয়েছে। জাতটির মাতৃ সারি ইরি ও পিতৃ সারি ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত। আমন মৌসুমে ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত এটি দ্বিতীয় হাইব্রিড ধানের জাত।
জাতটির মূল বৈশিষ্ট্য
এই জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো গাছের উচ্চতা ১০৫-১১০ সেন্টিমিটার, কাণ্ড শক্ত বিধায় ঢলে পড়ার সম্ভাবনা নেই। স্বাভাবিক অবস্থায় গাছ প্রতি গুছির সংখ্যা ১২-১৫টি। জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। ফলন ৬.০-৬.৫ টন/হেক্টর। দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৪ ভাগ। দানার আকৃতি সরু ও লম্বা। দানায় প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৯ ভাগ। ভাত ঝরঝরে। আমন মৌসুমে পিতৃ ও মাতৃ সারির জীবনকালের পার্থক্য তিন দিন ও বোরো মৌসুমে ছয় দিন। উভয় মৌসুমে এই জাতটির বীজ উৎপাদন সম্ভব। আমন মৌসুমে বীজ উৎপাদনে ফলন ১.৫-২.০ টন এবং বোরো মৌসুমে বীজ উৎপাদনে ফলন ২.৩-২.৫ টন। অর্থাৎ উভয় মৌসুমে এই জাতটির বীজ উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক।
চাষাবাদ পদ্ধতিঃ স্বল্প জীবনকাল বিধায় বীজতলায় বীজ বপনের সময় ২১-৩০ আষাঢ় (৫ জুলাই-১৫ জুলাই)। চারা রোপণ করতে হবে ১৫-২৫ শ্রাবণের (৩০ জুলাই-১০ আগস্ট) মধ্যে। বীজের হার ১৫ কেজি/হেক্টর। চারার বয়স ২৫-৩০ দিন। রোপণ দূরত্ব ১৫দ্ধ২০ সেন্টিমিটার। প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা ১-২টি। চারা লাগানোর ৫-৭ দিনের মধ্যে মরা গুছি হালি দ্বারা পূরণ (এধঢ় ভরষষরহম) করতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা (কেজি/বিঘা)
মোট সার ইউরিয়া ২০ কেজি, টিএসপি ৭ কেজি, এমপি ১১ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি এবং জিংক সার ১ কেজি। জমি তৈরির সময় ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ৭ কেজি করে, জিপসাম ৮ কেজি ও জিংক ১ কেজি একসঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ইউরিয়া চারা রোপণের ১০-১৫ দিন, ৩০-৩৫ দিন এবং ৫০-৫৫ দিন এই তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। শেষ কিস্তির ইউরিয়ার সফঙ্গ বাকি ৪ কেজি এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে এলসিসি কালার চার্ট ব্যবহার করে ও পূর্ববর্তী ফসলে ব্যবহৃত সারের অবশিষ্ট অবস্থা (জবংরফঁধষ বভভবপঃ) বুঝে সারের মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কাউন্সিল কর্তৃক প্রকাশিত ফার্টিলাইজার রিকমনডেশন গাইড অনুযায়ী কৃষি অঞ্চলভেদে বোরণের ঘাটতি থাকলে গাইড অনুযায়ী অনুমোদিত মাত্রায় বোরণ সার ব্যবহার করতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা
আগাছা দমনে আগাছানাশক ব্যবহার করলে প্রথম কিস্তির ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সঙ্গে অনুমোদিত আগাছানাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে এবং ক্ষেতে সেচ দিয়ে পানি ১০-১৫ দিন বেঁধে রাখতে হবে। এজন্য জমির সঠিক আইল ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। সার উপরি প্রয়োগের আগে জমি ২-৩ বার শুকনা দিতে পারলে অধিক কুশি পাওয়া সম্ভব। পরিমিত সেচ ব্যবহার করতে হবে এবং ধানে দুধ আসা পর্যন্ত জমিতে প্রয়োজনীয় পানি বা রসের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগ ও পোকামাকড়ের জন্য অনুমোদিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে। ১৫-৩০ কার্তিক (৩০ অক্টোবর-১০ নভেম্বর)। সাধারণত শীষের অগ্রভাগ থেকে ৮০ ভাগ পেকে গেলে ধান কাটতে হয়।
লেখক : প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান, হাইব্রিড রাইস বিভাগ, ব্রি, গাজীপুর-১৭০১।