কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মেঘনা নদীর উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে এবারও নারকেলের বাম্পার ফলন হয়েছে। নারকেল কেনা-বেচায় এখন দারুন সরগরম লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাট-বাজার। চলতি মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে শত কোটি টাকার বেশি নারকেল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে স্থানীয়ভাবে নারকেল ভিত্তিক কল-কারখানা গড়ে না উঠায় ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় দুই হাজার ৭৩৫হেক্টর জমিতে নারকেল বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৫শ’ ১০ হেক্টর, কমলনগর ৩৫০ হেক্টর, রায়পুর ৩৬৫ হেক্টর ও রামগতি উপজেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে নারকেলের বাগান রয়েছে। এ মৌসুমে সাড়ে ৫ কোটি কোটি পিসেরও বেশী নারকেল বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে যার বাজার দর শত কোটির টাকার বেশী। এছাড়াও দশ কোটি টাকার নারকেলের ছোবড়া বিক্রি হবে বলে আশা করে হচ্ছে। জেলায় নারকেলের প্রধান মোকামগুলো হলো- সদর উপজেলার দালাল বাজার, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, রায়পুর উপজেলার হায়দরগঞ্জ, রামগঞ্জ শহর, কমলনগর হাজির হাট, রামগতির আলেকজান্ডার। এসব বাজারে এখন কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছে নারকেলের পাইকারসহ মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। এখানকার নারকেল বাগেরহাট, ভৈরব, খাদেমগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
কয়েকটি নারকেল বাগানের মালিকরা জানান, নারকেলের চারা গাছ রোপণের সময় প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রতি বর্ষা মৌসুমে গাছের মাথা পরিস্কার করতে হয়। প্রতিটি গাছ ৫০-৬০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। প্রতি গাছে বছরে ২০০ থেকে ৫০০টি পর্যন্ত নারকেল পাওয়া যায়। সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের আনোয়ার হোসেনা নামে এক চাষি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা কম। এজন্য ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও স্থানীয়ভাবে শিল্পকারখানা গড়ে না উঠাকে দায়ি করেন তিনি।
চন্দ্রগঞ্জ বাজারের নারকেলের পাইকার কামাল হোসেন জানান, তিনি এ মৌসুমে হাজার পিস নারিকেল ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা দরে এ পর্যন্ত এক কোটি টাকার নারকেল কিনেছেন। এগুলো কয়েকটি জেলায় পাঠানো হয়েছে। তার মোকামে দশজন শ্রমিক নারকেল ছোবড়া তোলার কাজ করছেন। এ বাজারে তার মতো আরও ৪ জন পাইকার রয়েছেন। বর্তমানে মৌসুমের শুরু। তবে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর নারকেলের দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। দালাল বাজারের নারকেল ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান জানান, বর্ষা মৌসুমের প্রতি সপ্তাহে দালাল বাজার থেকে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার নারকেল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
একই বাজারের ছোবড়া কারখানার মালিক আকরাম হোসেন জানান, এ শিল্পে তেমন কোন লোকসান নেই। বার মাস নারকেলের ছোবড়ার চাহিদা রয়েছে। নারকেল শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, প্রায় ত্রিশ বছর যাবৎ তিনি নারকেলের ছোবড়া তোলার কাজ করছেন। এক হাজার নারকেল ছোবড়া তুললে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পান। দৈনিক তিনি এক থেকে দেড় হাজার নারকেলের ছোবড়া তুলতে পারেন। লক্ষ্মীপুর বণিক সমিতির সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু জানান, যেসব জেলায় নারকেল ভিত্তিক শিল্প-কারখানা রয়েছে, সেখানে হাজার পিস নারকেল ২৫-৩০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও ওই সংখ্যা নারকেল লক্ষ্মীপুরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪-১৮ হাজার টাকা।
স্থানীয়ভাবে নারকেল ভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে হাজারো মানুষের কর্মস্থানের পাশাপাশি চাষিরা তাদের নায্যমূল্য পেতেন। তিনি লক্ষ্মীপুরে নারকেল ভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার জন্য সরকার ও শিল্প উদ্যোগক্তাদের আহবান জানান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা জানান, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নারকেলের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে নারকেল সমৃদ্ধ এ জেলায় নারকেল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে তিনিও জানান।
সুত্রঃ বাসস