কৃষি প্রতিক্ষন রিপোর্ট : বুড়িগঙ্গা নদীর স্বচ্ছ পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে এবং এর চারপাশকে নয়নাভিরাম করতে এক মহাপরিকল্পনা গ্রহন করেছে সরকার । এর জন্য ব্যয় নির্ধারন করা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা । চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে শেষ হবে ২০২০ সালে । ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এটা ঐতিহাসিক সত্য । কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বুড়িগঙ্গা নদী একটি পচা ড্রেনে পরিনত হয়েছে । অতীতে এর স্বচ্ছ পানি প্রবাহ ফিরেয়ে আনতে নানা পরিকল্পনা গ্রহন করা হলেও তা দৃশ্যমান হয়নি । তাই বর্তমান পরিকল্পনাকে নিয়েও নানা শঙ্কা রয়েছে । তবে অভিজ্ঞমহলের মতে সম্বলিত প্রকল্প গ্রহন করলে বুড়িগঙ্গাকে দূষন মুক্ত করা অসম্ভব নয় ।
জানা গেছে গত জুন মাসে ১ হাজার ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার’ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ নদী পুনর্খনন করা হবে, যেন বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকা মহানগরীর চারপাশে বহমান নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বজায় থাকে। ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৯৪৪ কোটি টাকা। একনেক সভায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও বিএমডিএফের আর্থিক সহায়তায় দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হচ্ছে বুড়িগঙ্গার দুই তীর। ইতিমধ্যে ‘ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট’ নামে এ প্রকল্পটির মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে হাজারীবাগ থেকে পাগলা পর্যন্ত আধুনিকায়ন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত উন্নয়ন করা হবে। আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে কাজ শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)-এর উদ্যোগে ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও বাংলাদেশ মিউনিফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ)-এর ২ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্পটি হাতিরঝিলের আদলেই বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফিরিয়ে আনা হবে। এতে নদীর স্বাভাবিক গতি, নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ অবকাশ যাপনের জন্য বিলাসবহুল রিসোর্ট, হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে (চলাচলের রাস্তা), পার্ক, বসার স্থান, নদীঘাট, পর্যটকদের জন্য প্রমোদতরী, ভাসমান বিনোদন কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ, নদীর দুই পাশের প্রশস্ত সড়কে বাস সার্ভিস থাকবে। এতে করে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
বুড়িগঙ্গা নদী দূষনের অন্যতম কারন বর্জ্য । আবাসিক এলাকার পয়োবর্জ্য মিশছে এ নদীর পানিতে । সঙ্গে হাজারীবাগ এলাকার ট্যানারি এবং কেরানীগজ্ঞ এলাকার পোশাক কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীর দূষনের মাত্রা ভয়াবহ করে তুলেছে । সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া অপচনশীল বর্জ্য বুড়িগঙ্গা দূষনের অন্যতম প্রধান কারন হলেও সরকার হাজারিবাগ থেকে আজ পর্যন্ত ট্যানারি সরাতে পারেনি ।এই নদীর তীর ঘিরে যেসকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড যাদের বেদখল করেছে তাদের কি ব্যবস্থা হবে এই পরিকল্পনায় সেসব বিষয়ে কোন দিক নির্দশনা নেই । এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যপারে আশাবাদী দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন । তিনি জানিয়েছেন, বুড়িগঙ্গা এখন সবচেয়ে বেশি দূষিত নদী। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজধানী সৌন্দর্যে যোগ হবে নতুনমাত্রা আর বুড়িগঙ্গা ফিরে পাবে তার প্রান।