কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গবাদিপশুতে সয়লাব গাবতলীর পশুর হাট। পুরোপুরি জমে উঠেছে এ হাট। ক্রেতা আর্কষণে উপহারের ছড়াছড়ি চোখে পড়ার মতো। কুষ্টিয়ার ইসলাম মিয়া ১০ লাখ টাকা দামের একটি ষাঁড় গরুর সঙ্গে ১৫ হাজার টাকা দামের একটি খাসি ফ্রি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
উট বিক্রেতা জামাল হোসেন আট লাখ টাকা দামের একটি উটের সঙ্গে একটি ২০ ইঞ্চি টেলিভিশন ফ্রি দেওয়ার কথা মাইকে প্রচার করেন। এ ছাড়া গতকালও এ হাটে ভুটানের ভুট্রি গরুর ব্যাপক চাহিদা ছিল। দেড় মণ ওজনের একটি ভুটানি গরু ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ফলে গতকাল বিকাল থেকে এ হাটে দুই দিনের তুলনায় কিছুটা কম দামে গবাদিপশুর কেনা-বেচা শুরু হয়।
এ ছাড়া মিয়ানমার, নেপাল ও ভারত থেকে চোরাইপথে গরু আসছে। ভারতীয় সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে মিয়ানমার, নেপাল এবং ভুটানের দিকে ঝুঁকছেন বেপারিরা। এসব গরুর বেশির ভাগই আসে অবৈধভাবে। নেপাল এবং ভুটানের গরু আসছে ভারত ঘুরে। দেশে ঢুকছে সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে।
মিয়ানমারের গরু আসছে কক্সবাজার এবং বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে। রাজধানীর গাবতলী হাট ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। মিয়ানমারের গরু দেখতে অনেকটা দেশি গরুর মতো। আবার দেশি গরুর মতো হলেও দাম অনেকটা ভারতীয় গরুর মতোই।
চট্টগ্রাম, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ গরুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বৈধভাবে গরু আমদানি করা হয়। এ ছাড়া বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন চোরাইপথে প্রবেশ করছে মিয়ানমারের গরু। বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, মিস্ত্রিপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরুম, নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, উখিয়ার রেজু আমতলী, ফাঁড়িরখিল, বালুটিয়া এবং উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের গরু আসছে।
সরেজমিন গাবতলীর হাটে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকে আনা গরু দেখা গেছে। গাবতলী হাটে কথা হয় বেপারি রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, চারটি গরু এনেছেন ভুটান থেকে। প্রতিটি গরুর দাম পড়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ভুটান থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্তে পৌঁছায় এসব গরু। এরপর সেখান থেকে গাবতলী। পথে পথে চাঁদা গুনতে হয়েছে তিন হাজার ৫০০ টাকা। ভারতে এই সিন্ডিকেটের সদস্য রয়েছে। তারাই বাংলাদেশের সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন সীমান্তে পৌঁছে দেয় এসব গরু।
পশু ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিশ্বরোড মোড়, শিবগঞ্জ, রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ি, চারঘাট, জুলনপুর, খড়খড়ি, যমুনা সেতুর আগে রাইপুরসহ ১৫ টি স্পটে রীতিমতো চাঁদাবাজির হাট বসেছে। পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নামেই বেশির ভাগ জায়গায় চাঁদা তোলা হচ্ছে।
রাজশাহীর কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু বেশি আসছে। তবে অন্য অনেক সীমান্ত দিয়েই এবার কম গরু ঢুকছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে করে দেশি গরুর মালিকরা একটু বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন নিজেদের পশু। এদিকে, রাজধানীতে এবার ৭টি হাট বেড়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, নগরবাসীর ভোগান্তি কমাতে হাটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে গাবতলীর হাটে গতকাল ভোর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে।
গতকাল এ হাটে ৫-৬ মণ ওজনের ভারতীয় সাদা বড় ষাঁড় গরু বিক্রি হয়েছে দুই লাখ টাকায়। দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বলদ বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ হাজার টাকায়। কোরবানি উপলক্ষে এ বছর হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ।
কৃপ্র/ এম ইসলাম