কৃষি প্রতিক্ষণ রিপোর্টঃ হারিয়ে যাচ্ছে দেশী পাখি । এখন আর পাখির কিচির মিচির ডাকে ঘুম ভাঙ্গেনা গ্রামবাংলার মানুষের। প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি। দেশীয় পাখিরা গ্রামগঞ্জের ঝাউ-জঙ্গল, বাঁশ-ঝাড়ে বাস করলেও দ্রত জনবসতি গড়ে ওঠায় এসব পাখিরা তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করছে।
মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে জঙ্গল কেটে ফেলছে। ফলে হারিয়ে ফেলছে তাদের চিরাচরিত বাসস্থান। কিছুদিন আগেও মাঠ-ঘাট, ক্ষেতে-খামারে বিচিত্র ধরণের পাখিদের বিচরণ ছিল।পাখিরা সেসময় ঝাঁকে ঝাঁকে এসে পাখিরা তৃষ্ণা মেটাতো আর খাদ্য অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকতো। ফসলের মাঠে পাখি বসার দৃশ্য সচরাচর দেখা গেলেও এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে। অতীতে গ্রাম এলাকায় ব্যাপকহারে, বাবুই, টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালীহাঁস, বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল , কোকিল, কাকসহ বিভিন্ন পাখিদের দেখা যেত।
বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, কাঠ ঠোকরা, কোকিল, ডাহুক, ক্যাসমেচি, বাবুই, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাচাসহ অনেক পাখিকে আর দেখা যায়না। শোনা যায় না এসব পাখির ডাক। গ্রামবাংলার অতি পরিচিত যে পাখি ‘বউ কথা কও’ বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলতো সেই পাখির দেখা আর পাওয়া যায়না। বর্তমান প্রজম্ম চেনেনা এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনেনা কোনদিন। ফলে শিশু কিশোরদের কাছে দিন দিন হয়ে যাচ্ছে এসব পাখি ইতিহাস।
পাখি কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার অনেকাংশেই দায়ী। কৃষকরা এখন বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে সব সময় কীটনাশক প্রয়োগ করে। এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালীসহ বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ মরে যায় বা আক্রান্ত হয়। পাখিরাও দিনের পর দিন এসব খেয়ে মারা যাচ্ছে। তাছাড়া পাখি শিকারীদের নিষ্ঠুরতা তো রয়েছেই।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঝড়ে পাখির বাসা ভেঙ্গে পাখর ছানার মৃত্যু ঘটে ও ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পাখির বিলুপ্তি ঘটায় যেমনি জীববৈচিত্রের সংকট বাড়ছে, তেমনি আমরা হারিয়ে ফেলছ সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। গ্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই কেবল মানব জাতিই জীবের প্রতি দয়া, সহনশীলতা এবং সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে পাখির স্বাভাবিক বেঁচে থাকা বংশবিস্তারের সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ।
জানা যায়, বাংলাদেশে ৬৫০ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে ৩০টি বর্তমানে বিলুপ্ত, অতীতে ছিল। ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ১৪৩টি প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে কালেভদ্রে দেখা যায়। বাকি ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়। এই ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের।
কৃপ্র/ এম ইসলাম