কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষে আগ্রাহী হয়ে উঠেছেন পঞ্চগড়ের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূল, মাটি উপযোগী। অল্প জমিতে চাষ করে ফলন পাওয়া যায় বেশি। মরিচ বিক্রি করে মুনাফাও হয় ব্যাপক। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কৃষকদের অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ শুরু করেছেন। পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছিল। এবার এ পণ্য আবাদে জমির পরিমাণ ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও হয়েছে ৯ হাজার ৭৯০ হেক্টরে। আর শুকনা মরিচ উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৫ টন।
পঞ্চগড়ে স্থানীয় জাতের পাশাপাশি বাঁশগাইয়া, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টার, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন উচ্চফলনশীল (হাইব্রিড) মরিচ আবাদ হয়েছে। অনেক উঁচু জমিতে অন্য ফসলের ফলন ভালো না হলেও মরিচের হয়। এ রকম পতিত জমি মরিচ চাষের জন্য বেছে নিচ্ছেন কৃষকরা। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়েছে আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদরে।
আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর এলাকার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমি থেকে কাঁচামরিচ পাওয়া যায় ২৫-৩০ মণ। আর কাঁচামরিচ শুকনা করা হলে বিঘায় হয় আট-নয় মণ। মরিচ উৎপাদনে বিঘাপ্রতি জমিতে ব্যয় হয় ৯-১০ হাজার টাকা। আর এতে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে আয় হয় ৪০-৪২ হাজার টাকার মতো। ফলে অন্য ফসলের তুলনায় মরিচ চাষে মুনাফা বেশি। তাই কৃষকরা এর চাষে ঝুঁকছেন বলে জানান তিনি। তবে মরিচ চাষে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে কৃষকদের অভিযোগ।
এ এলাকায় মরিচ চাষে চাষী ছাড়াও লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক মজুর শ্রেণীর মানুষ। মরিচক্ষেতে কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে তাদের। ধামোর এলাকার মরিচক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করেন জবেদা খাতুন। তিনি জানান, ‘তারা প্রতিদিন ক্ষেত থেকে মরিচ তুলে মালিকের বাড়িতে দিয়ে আসেন। প্রতি ঢাকিতে (এক ধরনের বাঁশের পাত্র) ৪০ টাকা করে পান। প্রতিদিন সাত-আট ঢাকি মরিচ তোলা যায়।’ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পঞ্চগড়ের কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ কিনে সরবরাহ করছেন বিভিন্ন এলাকায়।
টাঙ্গাইল থেকে আটোয়ারী ফকিরগঞ্জ বাজারে মরিচ কিনতে এসেছেন একাব্বর আলী। তিনি বলেন, এখানে বিন্দু জাতের (চিকন) শুকনা মরিচটা অনেক ভালো। প্রতি মণ কিনতে হচ্ছে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে। আর অন্যান্য জাতের প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৯০০ টাকায়। এখান থেকে কেনা মরিচ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করবেন।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক বলেন, পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ বাড়ছে। এবার সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়েছে আটোয়ারীতে। প্রতি হেক্টরে ৭০-৭৫ টন মরিচ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে চাষীরা লাভবান হবেন বলে আশাবাদী তিনি।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম