কৃষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : নওগাঁর বরেন্দ্র উপজেলা সাপাহার ও পোরশায় আম চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। ইতিমধ্যে এ দুটি উপজেলার আম বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ দুটি উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় কয়েক বছর ধরে আম চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এখানে সাধারণত হাইব্রিড জাতের আম্রপলি, চষা, মল্লিকা, বারি ৩, ৪ ও দেশি জাতের মধ্যে ফজলি, সুরমা ফজলি, নাক ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাতি, মোহনভোগসহ বিভিন্ন জাতের সুমিষ্ট আম চাষ হয়ে থাকে।
সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক হোসেন বলেন, চলতি বছর প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার টন আমের উৎপাদন হবে, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তবে অন্য বছরের মতো এবারও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দর পতনের ফলে আম চাষিরা লোকসানের মুখে পড়বেন কিনা, তাই এখন তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, এবার মৌসুমের শুরু থেকেই প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুল ও গুটি আসে। এর পর থেকে বাগান মালিকরা ভালো ফলন পাওয়ার আশায় পরিচর্যা করছেন। আমগুলোকে টিকিয়ে রাখতে দিনে দু-তিন বার গাছে পানি স্প্রেসহ ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন।
পোরশা উপজেলার আম চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, আম যেন ঝরে না যায় এজন্য পানি স্প্রে ও রোগবালাইনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। একই উপজেলার সরাইগাছীর বাগান মালিক রাশেদ বলেন, কয়েক দিন আগে তীব্র খরায় বোঁটা শুকিয়ে আম সামান্য ঝরে পড়ছিল। বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে আমের উৎপাদন এবার খুব ভালো হবে। সাপাহারের বাগান মালিক তছির উদ্দীন সোনার বলেন, প্রতি বছর বেশ ভালো দামে আম বাগান বিক্রি করে এখানকার কৃষক। এবার আমের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আশা করছি কৃষক বেশ লাভবান হবে।
সাপাহার উপজেলার আম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ভালো ব্যবসার আশা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলনে আম চাষিদের মুখে হাসি ফুটবে। সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামান বলেন, বরেন্দ্রভূমির সীমান্তবর্তী এ এলাকায় যথাযথ প্রচারণার অভাব, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রযুক্তির ব্যবস্থা না থাকায় চাষি এবং অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ উপজেলায় একটি হিমাগার ও একটি জুস ফ্যাক্টরি স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন পাঠানো হয়েছে। একই কথা বলেছেন পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দীন শামীম। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা বলেন, সাপাহার ও পোরশায় চলতি বছর ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। উপজেলায় পাঁচ বছর ধরে হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের আম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন কৃষক। এতে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।