কুষি প্রতিক্ষন ডেস্ক : ধান চাষে সর্বোচ্চ ফলন পেতে হলে সঠিক জাত নির্বাচন, মানসম্মত বীজ ব্যবহার, বীজ বাছাই ও উন্নত পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করা জরুরি । আর তাই সব কৃষি উপকরণের মধ্যে গুণগত মানসম্পন্ন বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অন্য দিকে ভালো বীজ না হলে কৃষিক্ষেত্রে অন্যান্য বিনিয়োগ ফলপ্রসূ হবে না নিয়মতান্ত্রিকভাবে বীজ সংরক্ষণ না করাই বীজের গুণগতমান ঠিক থাকে না। তাই উন্নত পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করা হলে বীজের গুণগতমান সঠিক থাকবে।
আউশ বীজ সংরক্ষণ : কাটার পর ধান মাঠে ফেলে না রেখে যত সম্ভব মাড়াই করা উচিত। মাটি থেকে বীজ যাতে আর্দ্রতা শুষে নিতে না পারে তার জন্য কাঁচা খলার ওপর ধানমাড়াই করার সময় চাটাই, মোটা চট, ত্রিপল বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে। আধুনিক বীজ মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে বীজ মাড়াই করলে বীজের গুণাগুণ ভালো থাকে। এভাবে ধান মাড়াই করলে ধানের রঙ উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকে। ধান মাড়াইয়ের সময় যাতে অন্য জাতের বীজ মিশ্রিত না হয় সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে এবং সে জন্য মেঝে বা খলা থেকে অন্য জাতের ধান যতদূর সম্ভব দূরে রাখতে হবে। সব উপকরণ ঠিক রেখে কেবল মানসম্মত বীজ ব্যবহার করলে ধানের গড় ফলন ১৫ থেকে ২০% বৃদ্ধি করা সম্ভব। সুতরাং অধিক ফলন পেতে হলে ভালো বীজের প্রয়োজন। এজন্য যে জমির ধান ভালোভাবে পেকেছে, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি এবং আগাছামুক্ত সেসব জমির ধান বীজ হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ধান কাটার আগেই বিজাতীয় গাছ সরিয়ে ফেলতে হবে। বীজ রাখার ধান কেটে আনার পর আঁটি পালা দিয়ে না রেখে বাতাসে ছড়িয়ে রাখা প্রয়োজন। বীজ ধান ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে এক দিকে কীটপতঙ্গ ও ইঁদুর নষ্ট করে, অপর দিকে গজানোর ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বীজ ধান থেকে আশানুরূপসংখ্যক চারা পাওয়া যায় না। বীজ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ ধান কর্তন হতে পরবর্তী মৌসুমে বপনের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত বিজ্ঞানসম্মতভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে না পারলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা এবং চারা গজানোর শক্তি কোনোটাই ঠিক থাকে না। এজন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন-
সংগৃহীত বীজ ভালোভাবে ঝাড়াই করে অপরিপক্ব বীজ, রোগাক্রান্ত বীজ, খড়কুটা, ধুলাবালু ভালোভাবে পরিষ্কার করে বড় বড় পুষ্ট দানা বাছাই করে নিতে হবে। বীজ সংরক্ষণের আগে পর পর কয়েকবার রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে যেন বীজের আর্দ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে থাকে। দাঁত দিয়ে কাটলে যদি কট করে শব্দ হয় তাহলে বুঝতে হবে বীজ ঠিকমতো শুকিয়েছে।
যে পাত্রে বীজ রাখা হবে তাতে যেন কোনো ছিদ্র না থাকে। অল্প পরিমাণ বীজ রাখার জন্য তেলের ড্রাম কিংবা বিস্কুট বা কেরোসিনের টিন প্রভৃতি ধাতব পাত্র ব্যবহার করা ভালো। ধাতব পাত্র ব্যবহার করা সম্ভব না হলে, মাটির মটকা, কলস বা পলিথিন যুক্ত চটের বস্তা অথবা চটের বস্তায় পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিক ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। মাটির পাত্র হলে পাত্রের বাহিরের গায়ে আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে। পাত্রে বীজ রাখার আগে পাত্রগুলো আর্দ্রতামুক্ত করার জন্য ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেয়া প্রয়োজন। রোদে শুকানো বীজ ঠাণ্ডা করে পাত্রে ভরতে হবে। পাত্রটি সম্পূর্ণ বীজ দিয়ে ভরাট করে রাখতে হবে। যদি বীজের পরিমাণ কম হয় তবে বীজের ওপর কাগজ বিছিয়ে তার ওপর শুকনো বালি দিয়ে পাত্র পরিপূর্ণ করতে হবে। এবার পাত্রের মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে যাতে পাত্রের মধ্যে বাতাস ঢুকতে না পারে।
বীজ পাত্র মাচায় রাখা ভালো, যাতে পাত্রের তলা মাটির সংস্পর্শে না আসে। গুদামে বায়ু চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে। বীজ কখনো স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখা ঠিক নয়। সংরক্ষণ করা বীজ মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করা দরকার যাতে কোনো প্রকার পোকামাকড় বা ইঁদুর ক্ষতি করতে না পারে। দরকার হলে মাঝে বীজ শুকিয়ে নিতে হবে। এতে বীজের আর্দ্রতা সঠিক থাকবে। প্রতি টন গুদামজাত বীজে ৩টি ফসটক্সিন ট্যাবলেট সর্বনিম্ন ৭২ ঘণ্টা ব্যবহারে গুদামের সব ধরনের পোকামাকড় মারা যায়। তবে জৈব বালাই ব্যবস্থাপনাই শ্রেয়।
টন প্রতি ধানে ৩.২৫ কেজি নিম, নিশিন্দা বা বিষকাটালি পাতার গুঁড়া, শুকনা তামাক দিয়ে গোলাজাত করলে পোকার আক্রমণ হয় না। এসব পাতা পোকামাকড় প্রতিরোধক।
আমাদের দেশে আউশ ধানের ভালো জাত বেশি ছিল না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত কয়েকটি আউশ ধানের জাত যেমন ব্রিধান-৪২, ব্রিধান-৪৩, ব্রিধান-৪৮, ব্রিধান-৫৫ মাঠপর্যায়ে ভালো ফলন দিচ্ছে। এসব জাত কৃষকপর্যায়ে উল্লিখিত পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও সংরক্ষিত করা হলে মানসম্মত বীজের সহজলভ্যতা হবে ।
কৃপ্র/ কে আহমেদ / এম ইসলাম